লৌহজং প্রতিবেদক:টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে রাতের আঁধারে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে স্থানীয় স্বর্না ইটভাটায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আবাদি জমি। সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। অন্যদিকে ইটভাটার ম্যানেজার তারা মিয়া জানান প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের সিঙ্গুরিয়া নিকরাইল আঞ্চলিক সড়কের কাচিনা গ্রামে কয়েক একর কৃষি জমিতে দুইটি ভেকু মেশিন বসিয়ে ১০-১২ ফুট গভীর করে মাটি কাটছে। মাটি কেটে শত-শত ড্রাম ট্রাক দিয়ে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। বেপরোয়া গতির ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে ওই সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাফেরা ব্যাপক কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ড্রাম ট্রাকের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে স্থানীয়রা। তারা জানান, কৃষি জমিতে মাটি কাটার ফলে একদিকে যেমন আবাদ কমছে,অপরদিকে সরকারের কোটি টাকার সড়কটি খানা খন্দে পরিনত হচ্ছে।
স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সিঙ্গুরিয়া- নিকরাইলের সড়কটি দিয়ে দশ গ্রামের সাধারণ মানুষের চলাফেরা। সড়কটি চাপা হওয়ায় মাটি ভর্তি ড্রাম চললে অন্য কোন যানবাহন যেমন ভ্যান অটোরিকসা চলাচল করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তারা আরো জানায়, ড্রাম ট্রাক চলাচলের কারণে গত শনিবার রাতে তাদের বন্ধুকে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। পরে এলাকার যুব সমাজ মাটির গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এ নিয়ে মাটি ব্যবসায়ী স্বর্না ইটভাটার ম্যানেজার তাদের হুমকি দেয়। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে যুব সমাজের মধ্যে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানায়,স্বর্না ভাটার ম্যানেজার তারা মিয়া প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়।
এছাড়াও ম্যানেজার তার মিয়ার ভাই এলাকায় প্রভাবশালী তাকে দিয়েই প্রথমে অভাবী কৃষকের নিকট থেকে একটি জমি ক্রয় করে। সেখান থেকে এতটাই গভীর করে মাটি কাটে যে পাশের জমির মালিকরা পরে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। স্থানীয়রা জানায়, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অসহায় কৃষকেদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে। তারা প্রশাসনের সাথে আতাত করে মাটি কাটায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হয়না।
এছাড়াও স্বর্না ভাটায় কয়লার পরিবর্তে দিনরাত কাঠ পুড়াচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আজিজুল হক বলেন, রাতের আঁধারে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে শত-শত ড্রাম ট্রাক দিয়ে ভাটায় নেয় মাটি ব্যবসায়ীরা। ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক দিয়ে গ্রামের মানুষ সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেনা। আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। মাটির গাড়ী চলাচলে বাঁধা দিতে গেলে মাটি ব্যবসায়ীরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তিনি আরো জানায় এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে তিনি প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদুল হক তালুকদার জানান, এ বিষয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিকবার উপস্থাপন করেছেন। কোন পদক্ষেপে মাটি কাটা বন্ধ না হওয়ায় হতাশ তিনি।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. সিফাত-বীন-সাদেক জানান, রাতের আঁধারে কৃষি জমিতে মাটি কাটার বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি অবগত নন। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।