লৌহজং প্রতিবেদক নাগরপুর: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আদ্রিতা রহমানের বিরুদ্ধে একটি নিরীহ পরিবারকে জিম্মি করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
চক্রের মাধ্যমে সাজানো অভিযোগে নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আপত্তিকর ছবি তুলে সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল করাসহ নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আদ্রিতার প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. খোকন মিয়া ন্যায়বিচার চেয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, টাঙ্গাইলের দুদকের উপ-পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ভুক্তভোগী টাঙ্গাইলের নাগরপুরের পাকুটিয়া ইউনিয়নের সদস্য রাথুরা এলাকার মো. খোকন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে উল্লেখিত সচিব আদ্রিতার সাথে একত্রে কাজ করাকালীন সময়ে মোবাইলে তার ছবি ধারন করে তাকে প্রতারণা করে তার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে প্রায় চার লক্ষ ৫০ হাজার এবং নগদ তিন লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয়।
আদ্রিতার মা (ব্রেষ্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত) তার মাকে ভারতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ দুই লক্ষ টাকা, টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়া মুক্তা ক্লিনিকে অপারেশনের জন্য দুই লক্ষ টাকা এবং থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তিন লক্ষ টাকা খোকনের নিকট হতে ধার নেয়।
আদ্রিতা বলে থাইল্যান্ড থেকে এসে আমি ধারের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেব। থাইল্যান্ড থেকে ফেরত আসার কিছুদিন পর আদ্রিতার নিকট ধারের টাকা ফেরত চাইতে গেলে খোকনের সাথে আপত্তিকর ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল করাসহ নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয় এবং আরও টাকা দাবী করে।
তিনি আরও বলেন, আদ্রিতা অস্থিত্বহীন ভূয়া জন্মসনদ তৈরি করে অসাদু উপায়ে মানুষের নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি কোন প্রকার ছুটির দরখাস্ত না দিয়ে নিয়মিত অফিস না করে বিভিন্ন জায়গায় অনৈতিক ভ্রমন করতে যায়, সত্যতা মিলবে তার মোবাইল রেকর্ড লিস্ট ও পাসপোর্ট চেক করলে। তার অনিয়ম, প্রতারণা ও দূর্নীতির কারনে পাকুটিয়া ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ।
অভিযোগের ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আদ্রিতা রহমানের কথা বললে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উপজেলা অফিস সূত্রে জানতে পেরেছেন। ‘অভিযোগকারীর জাল জন্ম সনদের বিষয়টি অভিযোগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি কিভাবে জাল সনদ তৈরি করব। জন্ম সনদের দরখাস্তের ও,টি,পি নাম্বার চেয়ারম্যানের আইডিতে যায়।
বিষয়টি চেয়ারম্যান দেখেন। অফিসে অনুপস্থিত ও খোকনের সাথে আপত্তিকর ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল করাসহ নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি, টাকা আত্মসাত ও আরও টাকা দাবী বিষয়গুলি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তারা মা ও মেয়ে টাঙ্গাইল জেলা চালায়। আমি ক্ষুদ্র মানুষ তাদের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারি মো. সুমন বলেন, জন্ম সনদ তৈরি করার সময় চেয়ারমানের আইডি সচিব ব্যবহার করে। আর সচিবের আইডি আমরা ব্যবহার করি। তিনি আরও বলেন, সচিব নিয়মিত অফিসে আসেন না।
ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য পুলিশ (চৌকিদার) গনদের সাক্ষাতে সচিব নিয়মিত অফিসে আসেন না তার সত্যতা পাওয়া গেল।
উল্লেখ্য, সচিব পোস্টে অবৈধ পথ অবলম্বন করে চাকরি নেওয়ায় তার বিরোদ্ধে ডিসি অফিসে ও পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল।
নাগরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, পাকুটিয়া ইউনিয়ন সচিবের বিরুদ্ধে একটি অনিয়ম, দূর্নীতি ও প্রতারণার তদন্ত এসেছিল। বিষয়টির তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।